বহুকাল আগের কথা , একটা সময় ছিলো যখন টেক্সট বুক ছাড়া অন্য কোন বই ছুঁইয়াও দেখতাম না । আমি গপ্পের বই পড়ছি সবার মত ছোটকালে না বড়কালে । একদিন এক অত্যন্ত অপ্রয়োজনীয় এবং রোবট সমাজের কাছে মহামূল্যবান পরিক্ষা না দিয়া এক দারোগার বিল্ডিংয়ের ছাদে নিশা ভাং কইরা বাসার চিলেকোঠায় আইসা ধ্যানে বইছি । মেজাজ চরম খারাপ কারণ কোন নেশাই আমারে ধরে না । কাজেই নেশা করতে চাইলেও লাভ নাই , কোন ফ্লিংস নাই । অবশ্য নেশার জগতে একটা কথা আছে , টাল হইতে চাইলে হওয়া যায় , ব্যাপারটা সম্পূর্ণই মানসিক । আমার দ্বিমত আছে , তাইলে আর নেশা করারি দরকার কি , হুতাশে বাতাস খাইয়াই তো বেতাল হইয়া কার্টুনের মত ঘোরা যায় , বোতলের দরকার কি !
ধ্যান ভাংল । চোখ খুইলা দেখলাম ঘরের চিপায় শ খানেক ধুলাপড়া আজাইরা বই । এই এক ফালতু অনর্থক জিনিস , নিশ্চ্য় টেক্সট বুকের মত ফাও প্যাচাল আছে , রোবট হওয়ার ১০১ টি উপায় । এগুলারে কুচি কুচি কইরা ছিড়ড়া উড়াইয়া দেওয়া যাক । অথবা শিক্ষাই আলো সেই হিসাবে আগুনে পুড়াইয়া ছারখার কইরা দেয়া যাক । শেষে থাকুক কয়লা , শিক্ষাই অন্ধকার । ভাব্লাম ঘটনা কি আগে দুই-চাইর লাইন পড়ি ।
বইটা ছিলো ''হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম '' লেখক হুমায়ুন আহমেদ । এমন কোন আহামরি বই না । হিমু আমার প্রিয় চরিত্রও না নিছক বিনোদন ছাড়া , হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রগুলির মধ্যে আমার পছন্দ মিসির আলি । হিমুর মত নিজে রহস্য করতে আর রহস্য রাখতে ভাল্লাগেনা বরং মিসির আলির মত অন্যের বা অন্য রহস্যে ছুটতে সেইটারে কাটাছিড়া কইরা যৌক্তিক করতে ভাল্লাগে । কিন্তু বইটার কথা বললাম কারণ বইটা আমার শুরু ছিলো । গল্পের বইয়ের শুরু । এরপর সময় পাইলে পড়ছি এমন না সময় কইরা নিছি ।
নেশার খোঁজ আমি পাইছি । অনেকে আছে গাইতে ভালোবাসে অনেকে আবার শুনতে , অনেকে দেখতে অনেকে করতে , অনেকে লেখতে আর আমি পড়তে । শুরুটা একজন কৈরা দিছিলো , সেদিন যদি অন্য কোন ফালতু বই হাতে পড়ত হয়ত এত সুন্দর সময়গুলি পাইতাম না । আজকে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন । হুমায়ূন আহমেদ নামটা যেখানেই উঠে মনে হয় আমি সেই দুর্ভাগাদের একজন যে হুমায়ূন আহমেদেরে দেইখা বড় হইছে এবং একদিন ম্রিত্যুসংবাদ পাইছে । এবং যার বই এক ভিন্ন জগতের সন্ধান দিছে ।
সান্তনা এইটাই মহান লেখক হুমায়ূন আহমেদ আর মহান কুপাঠক আমার জন্মদিনরাত্রি একি মাসে
No comments:
Post a Comment