অনেকের কাছেই শুনি লেখালেখি দিয়া পরিবর্তন সম্ভব না । লেখালেখি যারা করে তারা কাপুরুষ । পরিবর্তন করতে হইলে রাস্তায় নামতে হবে ।
হয়তো । কিন্তু রাস্তায় নাইমা কি করতে হবে , রেস্লিং ? ভায়োলেন্স ? তাইলে ছোটবেলায় বা বড়বেলায় পড়ালেখা করার দরকার নাই পড়ালেখার বইতো কেউনা কেউ রাস্তায় ভায়োলেন্স না কৈরা কাপুরুষের মত ঘরে বইসা লেইখা থুইয়া গেছে । সবাই কেজি দরে বই পড়েন আর বই পড়তে পড়তে চোখ অন্ধ কৈরা ফেলানোর ফলাফল হইছে এই যে ভায়লেন্সের পথ বাইছা নেন । আপনার চিন্তাভাবনা গুটিবাজি সব কিন্তু হাজারো বই থেইকা নেওয়া শিক্ষার একটা সম্মিলিত প্রতিফলন । আপনার চাকরি , ব্যবসা বা হাত পা ছুইড়া বক্ত্রিতা ।
একটা দেশ চালাইতে হইলে কেবল লেখক না পায়ের তলার জুতার মুচির থেইকা থেইকা শুরু কৈরা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণীর লোকের সম্মিলিত প্রয়াস লাগে । সমস্যা হইছে যে লেখে সে পাব্লিকের কাছে বিশেষত ছাত্রদের কাছে দ্রুত পৌঁছায় । ধরেন জাফর ইকবাল/হুমায়ুন স্যাররে পাব্লিকে খায় । কেনো খায় ? তারা এমেরিকার কোথায় পিএইচডি করছে , বা ঢাবি শাহজালালের কোথায় পড়ায় এইসব দিয়া সে মাইনষের কাছে পৌঁছাইতে পারেনাই । সবাইর কাছে তাদের মূলপরিচয় তারা লেখে , সবাইর ঘরেই তাদের দুই চাইরটা বই আছে । একটা সিম্পল উদাহরণ দিলাম । যারা প্রচুর পড়ে তার মানে এইনা যে তাদের সবারি বিশ্লেষণ ক্ষমতা জন্মায় । যে ভোদাই হাজার পড়লেও ভোঁদাই-ই থাইকা যায় । কিন্তু এদের মধ্যেই একটা শ্রেণী দাঁড়ায় যারা একি সাথে পড়ে এবং চিন্তার প্রসার ঘটায় , চিন্তাতেও সমান সময় দেয় । এই শ্রেণীটাই পত্রিকায় ব্লগে ফেসবুকে বইয়ে লেইখা মাইনষের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে বা কোন মুভমেন্টের প্রাথমিক প্রস্তুতি লয় । কোন কিছুর মানুষ কতটুকু ইফোর্ট দিবো এইটা নির্ভর করে সে কতটুকু বুঝছে তার উপর । সমস্যা হইছে যে দেশে হুমায়ুন জাফরের মত গুণী লেখক আজকাল আর বাইরায়না আজকাল সস্তা মার্কেটিং বাজেভাবে ব্যাপক হইছে । প্রথম আলো সাইয়্যেদ জামিল পুরস্কার চলতেছে । রামছাগলরে ধইরা আইনা বুদ্ধিজীবী হিসাবে টকশোগুলা চলতাছে ।
৭১ এ কেবল রাস্তায় নামা যোদ্ধারাই তো লড়েনাই । যেই বেটায় ''মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি '' গাইছে যেই ব্যাটায় রাস্তায় না নাইমা কাপুরুষের মত ঘরে বইসা বোমা বানায়া দিছে তারাও লড়ছে , যেই ব্যাটায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই মুভমেন্ট নিয়া লেইখা চিল্লায়া সমর্থন সাহায্য যোগাইছে তারাও লড়ছে , যারা রেডিওতে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষরে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করছে তারাও লড়ছে ; যেই ডাক্তার যোদ্ধার চিকিৎসা করছে সেও লড়ছে । আর কত যে কলিমদ্দি দফাদার আছে যাদের কেউ চিনেনাই তারও হিসাব না ; এই যুগেও আছে । সবাইতো আর আন্দোলনের ভিত্রে সেলফি তুইলা আর পেইড দালালি কৈরা পেট চালায়না । আরও যদি ভালোভাবে বুঝতে চান সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারটা যে রাস্তায় না নামা কাপুরুষ জার্মান এবং ব্রিটিশ ম্যাথমেটিশিয়ানরা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করছে এইটা দেখতে (the imitation game 2014) পারেন ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখালেখিতে সবচেয়ে বেশি রেফারেন্স নেওয়া হয় হাসান হাফিজুর রহমানের ''বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র ১৫ খন্ড'' থেকে । যে বা যারা এগুলা সংগ্রহ করছে যা কিনা বাংলাদেশের পরবর্তী যাবতীয় আন্দোলনগুলা অনেকটাই এইসব রেফারেন্স ধইরা আগাইবো তারা কাপুরুষ তারা রাস্তায় নামেনাই । আবার এই কাঠখোট্টা ১৫ খন্ডের দলিল আপনে কখনোই পড়বেননা , কারণ মানুষের এই জাতীয় অকাট্য দলিল পড়ার জন্য একটা শক্তি লাগে । এই শক্তিটাও আসে হুমায়ুন আহমেদের ''জোছনা ও জননীর গল্প '' টাইপের কিছু বই দিয়া যেইখানে গল্পে গল্পে মুক্তিযুদ্ধরে পোলাপানের কাছে পৌঁছায় দেওয়া হয় । কাজেই দেখা যাচ্ছে একটা ব্যাপক চক্র চালাইতে হইলে অনেকটা বাস্তুসংস্থানের মত সব শ্রেণীর সব পেশার লোকই লাগে । মূল কাজটা হইছে যে যেইটাতে এক্সপার্ট , যতটুকু এক্সপার্ট , যত খুদ্র পরিসরে হোক সে যত ক্ষুদ্রই হোক তার ভেতর যত প্রতিবন্ধকতাই থাকুক ন্যূনতম প্রতিবাদটা চালায়ে যাওয়া । এগুলা দেখতে অনেক ক্ষুদ্র মনে হয় । সবাই মিল্যা ১ টাকা চান্দা দিলেও সাড়ে ষোল কোটি হয় । এই এক টাকা হচ্ছে শুরু , এইটা বাড়তে থাকবে ।
খুব রিসেন্ট একটা উদাহরণ দেই । গারো তরুণী রেপ এবং অপরাধি গ্রেফতার । হঠাত কৈরা দেশে রেপ বাইড়া গেলো , এমনকই যারা নারীবাদী না তারাও ক্ষেপলো । সমাজতো এখন আর কনজারভেটিভ না; জ্ঞানিগুনিরা বিবাহপ্রথার প্রতিবাদ করতেছেন ; তস্লিমা নাসরিন বিবাহের বীরোধিতা করতেছেন নিজেই ৪ বিয়া কৈরা , স্বচ্ছ নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিকমানের এক্টিভিজম হওয়ায় গুনিরা সমর্থন দিচ্ছেন । যে যেইখানে যেম্নে পারে একটু চেষ্টা করলেই এইসব ফালতু জিনিস এড়ান যায় ; আপোষেই লিটনের ফ্ল্যাটে লওয়া যায় । তুই হুদাই গেঞ্জাম করবি ক্যা ? এর মানে এই না যে এইটাই প্রথম হইছে । পার্বত্য এলাকায় প্রতি মাসে হইতাছে , চাঁদপুরের মতলবে নাকি নিয়মিত হয় এভাবেই এভারেজ গতিতে চলতেছিলো অঞ্চলভেদে । ফাঁকে দিয়া ধুমধাম লাগাতার কিছু শুরু করলো । শুরুটা হইছে পহেলা বৈশাখ দিয়া শেষটা চলতি আছে গারো তরুণী । এখন অনলাইনে সবাই চিল্লাইলো অফ্লাইনে কেউ কেউ রাস্তায় গেলো । মানুষ বিরক্তির চরম সীমায় গেলো । স্কুলের বাচ্চা , রেইপ কৈরা মাইরা ফালানো এগুলা সমাজের চরম অসুস্থতার লক্ষণ । বিষয়টা কারর ভাল্লাগলোনা । ক্ষোভ বাড়তে শুরু করলো । দেখেন ৭১ এ বহুত অন্যায় হইছে । কিন্তু মানুষজন্ সবচে বেশি ক্ষেপছে রেইপে । এমন বেশ কিছু নোংরা অন্যায় আছে যা খোদ চোর ডাকাতরাও সহ্য করেনা সহ্য করেনা , যখন নিজের আত্মিয়স্বজনের সাথেও এমন হইতে পারে ভাবে তখন রাস্তায় নামে । ফলাফল পুলিশ তুড়ি বাজায়ে গারো তরুণী কেইসে রেপিস্টগোরে ধইরা ফালাইছে । এর মানে খুবি সিম্পল । তারা চাইলে বাকি রেপের কুত্তাগুলারেও ধরতে পারে । ধরেনা কারণ পাব্লিক বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছায়না । অর্থাৎ রাষ্ট্রের ক্ষমতা নাই পাব্লিক ক্ষেপলে ।
মানুষ রাস্তায় নামবে । যারা সবসময় রাস্তায় নামে তারাতো ধান্ধাল । মানুষ রাস্তায় তখন নামে যখন দরকারে নামে , দেরী হইলেও পিঠ ঠেকলেই নামে । আবার অন্যায়ের প্রতিবাদ শেষে সমস্যা সমাধান হইলে নিজের পেশায় ফিরায় যায় । যারা সারাদিন রাস্তায় থাকে এরমানে তাদের ধান্ধাটা রাস্তাতেই হয় । মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক অংশ এই রাস্তায় নামা মানুষ না । রাস্তায় নামা মানুষের সংখ্যা ৩০ লক্ষ না ।
যাই হোক এই অনলাইন এখন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম । আপনে লাইক কমেন্ট সেলিব্রেটিজমরে ফেইম সাকার কয়া যতই গাইল পাড়েন এর বাইরেও একটা অংশ আছে যারা পাব্লিকের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে , এইসব অহেতুক একটা হুদাই বিপরীত স্রোতের ধান্ধালের কথার বেইল দেয়না । চাক্কু দিয়া মানুষ মারে তার মানে এই না যে আপনে ফল কাঁটা বন্ধ কৈরা দিবেন আর যে ফল কাটছে তারে মানুষ মারার অপবাদ দিয়া চেচাইবেন । মানুষ অনলাইনকেন্দ্রিক হয়া যাইতাছে , আবেগি বাস্তবতা আজ ভুলুন্ঠিত এই টাইপের মেকি কাইন্দাতো লাভ নাই ; মানুষ সময়ের প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় জিনিসটাতেই হাত লাগাইতেছে । চিল্লাইতে থাকেন অনলাইনে অফ্লাইনে সবখানে । ১০০ টা বিচার হয়তো পাইবেন না , ১ টা পাইবেন । ২-৪ টা ভালো বিচার হইলে এম্নেই অপরাধ অনেকাংশেই কইমা যায় । চিল্লাইতে থাকেন । যেইখানে যেম্নে পারেন , কোটি টাকার মাল হওয়া লাগবেনা , ১ টাকার মাল হইলেও চিল্লাইতে থাকেন । পড়তে থাকেন , শিখতে থাকেন বুঝতে থাকেন । এভাবেই হয় । আপ্নের এই পড়াশুনা একসময় হিপনোটাইজ কৈরা রাস্তায় নামায়ে আনবে । কারণ জনতা ক্ষেপলে নেতাগো প্রটেকশনে রাস্তায় নামেনা , নামে বিবেকে ।
No comments:
Post a Comment